# আসসালামু আলাইকুম

মসজিদে নববী (আরবি: المسجد النبوي, [mæsʤıd ænːæbæwiː], ইংরেজি: Al-Masjid al-Nabawi) এর শাব্দিক অর্থ হলো নবীর মসজিদ; তবে এরদ্বারা মদীনায় হিযরতের পর ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) কর্তৃক নির্মিত মদিনা মসজিদ কে বোঝানো হয়ে থাকে। এই মসজিদের অভ্যন্তরে মুহাম্মদ (সা:)-এর রওযা সমাধিস্থল অবস্থিত। পৃথিবীর সকল মসজিদ সমস্থানীয় হলেও কাবা-এর পরেই মসজিদে নববী'র মর্যাদা।


মসজিদে নববী মানে নবীর মসজিদ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মদিনা শরিফে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মদীনায় প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উট যে স্থানে প্রথম বসে পড়েছিল, সেই স্থানটিই হল মসজিদে নববীর কেন্দ্রস্থল। পবিত্র কাবা শরিফ মসজিদে হারামের পরেই মদিনা মসজিদের অবস্থান। মহানবীর হিজরতের আগ পর্যন্ত মদিনার নাম ছিল ইয়াসরিব। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) ইয়াসরিবের নাম পাল্টে রাখেন মদিনা। হিজরতের পর মুসলমানদের নামাজের জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক নির্মিত হয় মদিনা মসজিদ।

এ মদিনা মসজিদটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ৬২২ খ্রিঃ নির্মাণ করেন। অনেক আরব ঐতিহাসিক মদিনা মসজিদের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাদের মধ্যে বালাজুরী অন্যতম। তার মতে, মহানবী কর্তৃক মদিনা মসজিদ ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়। মসজিদটি নির্মাণ করতে ৭ মাস সময় লেগেছিল। ঐতিহাসিক ইবনে হিসামের মতে, ৭ মাসের অধিক সময় এবং ৬২৩ খ্রিঃ মসজিদটি নির্মিত হয়। প্রকৃতপক্ষে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরের পর থেকে শুরু হয়ে ৬২৩ খ্রিঃ মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মদিনা মসজিদের নির্মাণকাল নির্ধারণ করা হয়। মদিনা মসজিদের মাধ্যমে ইসলামী শিল্পকলার প্রকাশ ঘটে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মদিনা মসজিদের নির্মাণের জন্য নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামক দু’জন বালকের নিকট হতে জমি ক্রয় করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দশ দীনার মূল্যে স্থানটি খরীদ করলেন। আবুবকর (রাঃ) মূল্য পরিশোধ করলেন। অতঃপর তার আশপাশের কবরগুলি এবং বাড়ী-ঘরের ভগ্নস্তূপ সহ স্থানটি সমতল করলেন। গারক্বাদের খেজুর গাছগুলি উঠিয়ে সেগুলিকে ক্বিবলার দিকে সারিবদ্ধভাবে পুঁতে দেওয়া হয়। ঐ সময় ক্বিবলা ছিল বায়তুল মুক্বাদ্দাস, যা ছিল মদীনা হতে উত্তর দিকে। তিনটি দরজার দু’বাহুর স্তম্ভগুলি পাথরের, মধ্যের খাম্বাগুলি খেজুর বৃক্ষের, দেওয়াল কাঁচা ইটের, ছাদ খেজুর ডালপাতার এবং বালু ও ছোট কাঁকর বিছানো মেঝে-এই নিয়ে তৈরী হল মসজিদে নববী, যা তখন ছিল ৭০×৬০×৭ হাত আয়তন বিশিষ্ট। পরবর্তীতে মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন প্রতিটি কোণ হতে তীর নিক্ষেপ করে যে পরিমাণ জায়গা পাওয়া গেল তা হলো একটি ক্ষেত্র। বর্গের প্রতিটি বাহুর পরিমাণ হয় ১০০ হাত বা ৫৬ গজ। অর্থাত্ মদিনা মসজিদের আয়তন হল ১০০–১০০ হাত বা ৫৬–৫৬ গজ। ইবনে সাদ ও দিয়ার বকরী বলেন, মসজিদের ভিটি ও দেয়ালের নিম্নভাগ ৩ হাত পর্যন্ত প্রস্তর নির্মিত ছিল। প্রথম পর্যায়ে মদিনা মসজিদ রৌদ্র শুষ্ক ইট দ্বারা নির্মিত হয়। এই রৌদ্র শুষ্ক ইট বাকী আল-খাবখাবা উপত্যকা হতে আনিত কাদা দ্বারা তৈরি হয়েছিল। তখন মদিনা মসজিদের দেয়াল ছিল ৭ হাত উঁচু। ছাদকে শক্তিশালী ও মজবুত রাখার জন্য মদিনা মসজিদের ৩৬টি খেজুর গাছকে স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। মসজিদের ছাদ নির্মিত হয়েছিল খেজুর পাতা দিয়ে। ছাদকে সুন্দর করার জন্য, রৌদ্র ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য খেজুর পাতার ওপর কাঁদামাটির আস্তরণ দেয়া হয়েছিল। ১৬ বা ১৭ মাস পরে ক্বিবলা পরিবর্তিত হলে উত্তর দেওয়ালের বদলে দক্ষিণ দেওয়ালের দিকে ক্বিবলা ঘুরে যায়। কেননা মক্কা হল মদীনা থেকে দক্ষিণ দিকে। এ সময় উত্তর দেওয়ালের বাইরে একটা খেজুর পাতার ছাপড়া দেওয়া হয়। আরবীতে বারান্দা বা চাতালকে ‘ছুফফাহ’ বলা হয়। উক্ত ছুফফাহ’তে নিঃস্ব ও নিরাশ্রয় মুসলমানদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া হত। পরবর্তীতে তাদের কোন ব্যবস্থা হয়ে গেলে তারা চলে যেতেন। বারান্দায় বা চাতালে সাময়িক আশ্রয় গ্রহণকারীগণ ইতিহাসে ‘আছহাবে ছুফফাহ’ (أصحاب الصفة) নামে খ্যাতি লাভ করেছেন ।

স্থানাঙ্ক: ২৪.৪৬৮৩৩৩° উত্তর ৩৯.৬১০৮৩৩° পূর্ব

অবস্থান মদীনা, হেজাজ, সৌদি আরব প্রতিষ্ঠিত সি ৬২২

স্থাপত্য তথ্য

ধরণ শাস্ত্রীয় এবং সমসাময়িক ইসলামিক; অটোমান; মামলুক

ধারণক্ষমতা ৬০০,০০০ (হজ এর সময়কালে ১০,০০,০০০ বৃদ্ধি)

মিনার ১০

মিনারের উচ্চতা ১০৫ মিটার (৩৪৪ ফু)

নির্মাণকাল

মসজিদ নির্মাণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। তিনি নিজ হাতে ইট ও পাথর বহন করেন। এ সময় তিনি সাথীদের উৎসাহিত করে তাদেরকে সাথে নিয়ে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আখেরাতের আরাম ব্যতীত কোন আরাম নেই’। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা কর’।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘হে আল্লাহ! আখেরাতের কল্যাণ ব্যতীত কল্যাণ নেই। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের সাহায্য কর’। মসজিদ নির্মাণের বরকত মন্ডিত কাজের প্রতি উজ্জীবিত করার জন্য তিনি বলেন,

এটা খায়বারের বোঝা নয়। একাজ আমাদের পালনকর্তার অতীব পুণ্যময় ও পবিত্র কাজ’। রাসূলের নিজ হাতে কাজ করায় উৎসাহিত হয়ে ছাহাবীগণ গেয়ে ওঠেন-

যদি আমরা বসে থাকি, আর নবী কাজ করেন, তবে সেটা আমাদের পক্ষ থেকে হবে নিতান্তই ভ্রষ্ট আমল’।

সে সময় মদিনা মসজিদের প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা ছিল। প্রধান প্রবেশ পথটি ছিল দক্ষিণ দিকে। এটি দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করত এবং বের হত। পশ্চিম দেয়ালে ছিল মসজিদের দ্বিতীয় প্রবেশ পথ। এটি বাবে রহমত নামে পরিচিত তৃতীয় প্রবেশ পথটি পূর্ব দেয়ালে ছিল। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এটি দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতেন। এজন্য এটির নাম হয় বাব উন নবী। ঐতিহাসিক উইনসিংকের মতে, মদিনা মসজিদের দরজা প্রস্তর নির্মিত ছিল। বর্তমানে মদিনা মসজিদ আগের চেয়ে অনেক সম্প্রসারিত ও নতুন ডিজাইনের। প্রাচীন মদিনা মসজিদের পার্শ্বেই ছিল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর বাসগৃহ। মক্কা হতে মদিনায় হিজরতের সময় ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে হিজরতকারীদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ ও মুসলমানদের নামাজের সুব্যবস্থার নিমিত্তে জমি ক্রয় করা হয়। যার বৃহদাংশে মসজিদ ও অল্পাংশে হুজুরা নির্মিত হয়। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মসজিদের নির্মাণ কাজে হাত দেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশের হাশেমী গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। মক্কা হতে মদিনায় হিজরত মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও পৃথিবীর মানচিত্রে ‘মদিনা’ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এ স্বাধীন মদিনা রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান ছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)। তিনি মসজিদে নববী হতেই ইসলাম প্রচার, রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মদিনায় হিজরত থেকে হিজরী সাল বা বছর গণনা শুরু হয়। জেনে রাখা প্রয়োজন, মদিনা সনদ হল বিশ্বের ইতিহাসে লিখিত সর্বপ্রথম সংবিধান। মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (স.) এখানেই সমাহিত করা হয়। মদিনায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর রওজা হওয়ায় সকল মুসলমানের নিকট মদিনা মসজিদ পবিত্র ও সম্মানিত। একমাত্র মদিনা মসজিদেই সর্বপ্রথম মেহরাব, মিম্বার, আজান দেয়ার স্থান। মদিনা মসজিদ বা মসজিদে নববী মুসলমান শাসকদের দ্বারা বহুবার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মুহাম্মদ (সা:) ওফাতের পর হযরত ওমর (রা:) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদে রববীর সম্প্রসারণ করেন। তিনি মসজিদটি উত্তর দিকে ৩০ হাত, দক্ষিণ দিকে ১০ হাত, পশ্চিম দিকে ২০ হাত সম্প্রসারণ করেন। হযরত ওমর (রা:) এর সময় মসজিদের পরিমাণ দাঁড়ায় উত্তর-দক্ষিণে ১৪০ হাত, পূর্ব-পশ্চিমে ১২০ হাত। হযরত ওসমান (রা:) এর সময় ৬৪৬-৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে খেজুরপাতার পরিবর্তে ছাদে সেগুণ কাঠ ব্যবহার করা হয়। ছাদের আকার দাঁড়ায় ১৬০*১৩০ হাত। এ সময় সম্প্রসারিত হয়ে মসজিদের আকার দাঁড়ায় উত্তর দক্ষিণে ১৬০ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৫০ হাত। খলিফা আল ওয়ালিদের সময় মদিনা মসজিদটি আধুনিক ইমারতে পরিণত হয়। ওয়ালিদ ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে মসজিদে নববীকে সাজিয়ে তোলেন। তাঁর সময় মসজিদে নববীর পরিমাপ দাঁড়ায় ২০০*২০০ হাত। ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সর্ব প্রথম মদিনা মসজিদের চারকোণে ৪টি মিনার নির্মাণ করেন আল ওয়ালিদ। তখন প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ছিল ৫০ হাত এবং প্রস্থে ছিল ৮ হাত। খলিফা মাহদী ৭৭৫-৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি সম্প্রসারণ করেন ৩০০*৩০০ হাত। আর মামলুক সুলতান কয়েত-বে মসজিদে নববীতে গম্বুজ প্রতিষ্ঠিত করেন। এতে গম্বুজ করা হয় ১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দে। গম্বুজ সবুজ রং-এর আস্তরণ দিয়েছিলেন ওসমানী সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমান আধুনিকায়নে মসজিদ-এ নববীর রূপদান করেন সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ। এর পরিকল্পনা করা হয় ১৯৪৮ খ্রীস্টাব্দে। ১৯৫৩-১৯৫৫ সাল নাগাদ মসজিদ আধুনিকায়ন করা হয়। বিশালকার মসজিদে নববীর সমস্ত রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব সৌদি রাজ পরিবারের।